শহিদ ছেলের কবরের পাশেই আশ্রয় হলো মায়ের

7

দুর্গাপুর প্রতিনিধি : ঢাকায় দিনমজুরির কাজ করতেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার জাকির হোসেন (২৪)। গ্রামের বাড়িতে একটা ঘর তৈরির স্বপ্নে কষ্টের রোজগারের টাকায় এক খন্ড জমি কিনেছিলেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ২১ জুলাই ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জাকির হোসেন। পরদিন সকালে গ্রামের বাড়িতে জানাজার পর সেই জমিতেই দাফন করা হয় জাকির হোসেন কে।

নিহত জাকির হোসেনের বাড়ি দুর্গাপুরের পূর্ব বাকলজোড়া গ্রামে। ওই গ্রামের দিনমজুর মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে জাকির। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে এখনও পাগলপ্রায় তাঁর মা মিছিলি বেগম।

রাজধানীর বাড্ডায় মাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন জাকির হোসেন। ঢাকায় ওয়াসার পানির লাইন মেরামতের কাজ করতেন তিনি। নিজের জমানো টাকায় গ্রামের বাড়িতে একখন্ড জায়গা কিনেছিলেন। স্বপ্নছিলো এলাকায় এসে ছোট একটি ঘর বানিয়ে মা কে নিয়ে থাকবেন জাকির হোসেন। সেই স্বপ্ন আর পুরণ হলো না।

জেলা সমাজসেবা দপ্তরের সহায়তায় জাকির হোসেনর কবরের পাশেই মায়ের জন্য তৈরী করে দেয়া হয়েছে একটি আধা ঘর। শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে পুর্ববাকলজোড়া গ্রামে জাকির হোসেনের মা মিছিলি বেগমের হাতে ঘর হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ^াস।

এসময় অন্যদের মাঝে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) শামীমা ইয়াসমিন, ইউএনও সাভিদ রেজওয়ানুল কবীর, সহকারি কমিশনার (ভুমি) মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাসুল তালুকদার, ওসি মো. মাহমুদুল হাসান, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির যুগ্ন-আহবায়ক রাতুল খান রুদ্র, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাকিদগণ সহ স্থানীয় গন্যমান ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।

মিছিলি বেগম কে বলেন, আমার স্বামী দরিদ্র দিনমজুর ছিলেন। ভিটামাটি কিছুই ছিল না আমাদের, আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বসবাস করতাম। জাকিরের যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যান। আমার আর কিছুই রইল না, এখন কে দেখবো আমারে?। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলের মুখের দিকে চেয়ে জীবনটা পার করতে শুরু করেছি। জাকির বড় হলে দুঃখ ঘুচবে সেই আশা ছিলো আমার। কিন্তু একটা গুলি এসে আমার সব আশা ভেঙে দিয়েছে। আমার আর কোনো স্বপ্ন নেই। আমার পৃথিবী শেষ হয়ে গেছে। এভাবে বেঁচে থাকারও মানে নেই। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, মহান আল্লাহ যেন তার বিচার করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here