নেত্রকোনায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলসহ গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৭ জুলাই নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের ভরাপাড়া গ্রামে একদল দুষ্কৃতিকারী ইউসুফ আব্দুল্লাহর পৈত্রিক মালিকানা জমি দখল করে সারি সারি মেহেগনি গাছ কেটে ফেলেছে। তবে খবর পেয়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারে জমি দখল সহ সারি সারি মূল্যবান মেহেগনি গাছ মাসুদুল আজিজ টিটুর নেতৃত্বে কাটা হয়েছে। তিনি নেত্রকোনা জেলা বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও তার কোন সুস্পষ্ট পদবী পাওয়া যায়নি। শনিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহে ছোট বাজার এলাকায় স্থানীয় এক সংবাদপত্র কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইউসুফ আব্দুল্লাহ। তিনি প্রয়াত মুফতি ফজলুল হকের ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউসুফ আব্দুল্লাহ বলেন, আমার পৈত্রিক জমি সহ সারি সারি মূল্যবান মেহেগনি গাছ মাসুদুল আজিজ টিটুর নেতৃত্বে কাটা হয়েছে। নির্বিচারে গাছ কেটে আমার যেমন আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে পরিবেশের। যা বর্তমান সরকারের নীতির মারাত্মক লঙ্ঘন। তিনি বলেন, ভরাপাড়া গ্রামে আমার পৈত্রিক সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে গেলে তথাকথিত নেত্রকোণা জেলা বিএনপির নেতা মাসুদুল আজিজ টিটুর নেতৃত্বে ভরাপাড়া ও গগডী গ্রামের কিছু দুষ্কৃতিরা আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি হুমকী, হামলা ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে হয়রানি করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। বর্তমানে সে বিএনপির ত্যাগী নেতা হিসাবে নিজেকে জাহির করলেও তার আচরণ ফ্যাসিবাদের মত ভয়ঙ্কর। বিগত ১৬ বছরেও আওয়ামী দোসরদের সাথে মিশে সব রকম অপকর্ম চালিয়ে গেছে। ভরাপাড়া গ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে জমি বিক্রয় ও দখল, সম্পত্তি লোটপাট, মামলাবাজী, কিশোর গ্যাং এর মাধ্যমে হামলা সহ নানা ধরণের অপকর্ম চালিয়ে গেছে গত ১৬ বছর। তার নেতৃত্বে গ্রামে গড়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। এরা গ্রামের নিরীহ মানুষ কে পুলিশের ভয়ভিতী ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।
ইতিপূর্বে ভরা মৌজায় ৩৫৫ দাগে আমার মালিকানা জমি জাল দলিল করে বিক্রি করে অবৈধ দখল করে নেয় টিটু গংরা। সালিশ দরবার করে মিমাংশা চালাকালীন ৩৩২ দাগের অপর আরেক জমি দখল নিয়েছিল এই সংঘবদ্ধ চক্রটি। এরা গ্রামের প্রতিটি শালিস দরবারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে আসছে। টিটু গংদে বিরুদ্ধে নেত্রকোণা কোর্টে সিভিল মামলা দায়ের করিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ফেব্রুয়ারি ২৫ চলতি ইরি-বোরো ধান মৌসুমের শুরুতে আমার জমির সেচ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে এই টিটু গংরা। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হস্তক্ষেপ করলেও উশৃঙ্খল বিএনপির নেতা দাবি করা এই টিটু তার অবস্থানে অটল থেকে আমার আর্থিক ও ফসলের ক্ষতি করেছে। এছাড়াও মাপজোখ ছাড়াই আমার ভিটাবাড়ির একটি অংশ জোড় করে দখল নিয়ে রেখেছে এই টিটু গংরা। বর্তমানে ভিটা বাড়ি মাপঝোখ করে আমার অংশ বুঝে নিতে পারছিনা এই চক্রের অত্যাচারে। প্রাপ্য অংশ দাবী ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি একাধিকবার হামলার স্বীকার হয়েছি এই সন্ত্রাসী টিটু কর্তৃক।
মাসুদুল আজিজ টিটুগংরা পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা ছাড়াই সংঘব্ধ চক্রের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবত গ্রামের নিরীহ কষ্টার্জিত আয়ের লোকদের কাছে নানা কৌশলে জমি বিক্রির কথা বলে অগ্রিম কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে জমির দলিল রেজিষ্ট্রি করে দিচ্ছি বলে বাকি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু ভোক্তভোগীরা তার ভয়ে এই বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছেনা। টিটু পূর্বে গ্রামের ফসল, গাই-বাছুর, পুকুর ইত্যাদি দেখবাল করার জন্য বাৎসরিক টাকার চুক্তিতে প্রতিবেশী দরিদ্র পুরুষ সদস্যদের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে টিটু তাদেরকে প্রাপ্য টাকা না দিয়ে চুরি সহ বিভিন্ন হয়রানী মূলক মামলা দিয়ে নিঃস্ব করেছে এবং ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে। ভূক্তভোগীরা তার আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে সে জেলা বিএনপির সদস্য হয় কি করে।
জানা গেছে, প্রয়াত এড. আব্দুল আজিজ তালুকদারের ২য় ছেলে মাসুদুল আজিজ টিটু। ভিসিডির ব্যবসা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু। পূর্বে টিটু নেত্রকোণা পৌর বিএপির সভাপতি ছিল। চাঁদাবাজী, মাদক ও অবৈধ দখলবাজী ছিল তার মূল পেশা। ২০০৭-০৮ সালের যৌথ বাহিনীর হতে মাদক সহ গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছিল দীর্ঘদিন। বর্তমানে তার আরেকটি আয়ের উৎস নেত্রকোণা বাসস্টেশনে চাদাবাজি।
টিটুর এসব অপর্কমের সার্বিক চিত্র তুলে আনতে গণমাধ্যম কর্মীরা ভরাপাড়া গ্রামে গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের লাঞ্চিত করেছে। তার অপকর্ম বিষয় একাধিকবার দেশের জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হলেও বহাল তবিয়তে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এ যেন ফ্যাসিবাদের ১৬ বছরের দুঃশাসনের সূর্য নতুন করে টিটুর নেতৃত্বে ভরাপাড়া গ্রামে জ্বলে উঠেছে। ফ্যাসিবাদরা যে ধরণের আতংকিত কর্মকান্ড চালিয়ে গেছে বর্তমানে টিটুর নেতৃত্বে ঐগুলোই চলমান, হাত বদল হয়েছে মাত্র।
এভাবেই ভরাপাড়া গ্রামে মাসুদুল আজিজ টিটুর গড়া সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন ভাবে অধিপত্য বিস্তার করে আসছে। টিটুর এহেন কার্যকলাপে ভরাপাড়া গ্রামের জাতীয়তাবাদী ঘরনার জনগনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাসুদুল আজীজ টিটুর মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।ভরাপাড়া গ্রামের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বিষয়ে এএসপি (অপরাধ) নেত্রকোনা এর সাথে যোগাযোগ করলে এএসপি অভিযোগুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং ঘটনা স্থালে পুলিশ পাঠান।