Home Uncategorized তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক টিম ও নতুন কমিটির উদ্যোগে দুর্গাপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানের উন্নয়নে...

তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক টিম ও নতুন কমিটির উদ্যোগে দুর্গাপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত

2

দুর্গাপুর প্রতিনিধি : নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সার্বিক উন্নয়নে স্থানীয় তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী দল ‘তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক টিম’ এবং নতুন গঠিত কমিটির সমন্বিত প্রচেষ্টা ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকা এই কবরস্থানটি এখন একটি সুপরিকল্পিত, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক টিমের নিরলস সেবা তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক টিম দীর্ঘদিন ধরে এই কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। দলটির সদস্যরা নিয়মিত কবরস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনে কবর খননের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। এছাড়াও, পবিত্র মাহে রমজানে ইফতার সামগ্রী সংগ্রহ করে হতদরিদ্র রোজাদার পরিবারে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন। তাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত এবং নিঃস্বার্থ সেবা স্থানীয়দের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

নতুন কমিটির উদ্যোগে ব্যাপক উন্নয়ন গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪-এ একটি ৩১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর কবরস্থানের উন্নয়নে নতুন গতি আসে। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু বড় উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:-সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও পুরাতন সীমানা প্রাচীর সংস্কারের পাশাপাশি তা সুন্দর করে রং করা হয়েছে। হাঁটার পথ তৈরি হয়েছে এবং রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ লাগানো হয়েছে, যা কবরস্থানের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়েছে। আলোর সুব্যবস্থা, অজুখানা, লাশ রাখার ঘর এবং দর্শনার্থীদের জন্য বসার স্থানও তৈরি করা হয়েছে। প্রতি মাসের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত রিপোর্ট কবরস্থানের নোটিশ বোর্ডে টানানো হচ্ছে, যা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, কবরস্থানটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সকলের পরামর্শে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সকল কাজে স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।

কবরস্থানের নবগঠিত কমিটির সভাপতি উমর ফারুক হাওলাদার এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, কবরস্থানটি আমাদের শেষ ঠিকানা। এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক টিমের তরুণদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আমাদের নতুন কমিটির সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা এই বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নই করিনি, বরং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে মাসিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করছি। আমরা আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং আমরা এই কবরস্থানকে আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে পারব।

তেরি বাজার বড় মসজিদ দারুল উলুম আবাসিক মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি আশরাফুর রহমান আনসারী এই মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, কবরস্থান হচ্ছে আখেরাতের প্রথম মনজিল। এখানে যারা শুয়ে আছেন, তাদের জন্য শান্তি কামনা করা এবং এই স্থানটিকে যথাযথ সম্মান দেওয়া আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। আমি আনন্দিত যে, স্থানীয় তরুণ এবং নতুন কমিটি এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। তাদের এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার এবং এটি অন্যদের জন্য একটি ভালো উদাহরণ হয়ে থাকবে।

তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক কমিটির দলনেতা মাহমুদুল হাসান সুজন বলেন, আমাদের দল ছোটবেলা থেকেই এই কবরস্থানের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। কিন্তু কমিটির নতুন সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমরা আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি। এই কাজ শুধু কবরস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের সমাজের প্রতি আমাদের

দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। আমরা মনে করি, এই ধরনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

কবরস্থান কমিটির উপদেষ্টা হাজী আবুল কাশেম এই উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসা করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কবরস্থানটি খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক টিম এবং নতুন কমিটির উদ্যোগে যে পরিবর্তন হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখন এটি একটি সুন্দর ও শান্তিময় স্থানে পরিণত হয়েছে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে, সঠিক নেতৃত্ব এবং জনসচেতনতা একটি বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

স্থানীয় সাংবাদিক ওয়ালি হাসান তালুকদার এই উন্নয়নমূলক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, দুর্গাপুরের কেন্দ্রীয় কবরস্থানটি ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানের আদলে গড়ে উঠছে। একটি সুপরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল কবরস্থান কীভাবে পরিচালিত হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই নতুন কমিটি এবং তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক টিম। তাদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে, সঠিক নেতৃত্ব এবং জনসচেতনতা থাকলে যেকোনো কাজ সুন্দর ও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। আমি আশা করি, এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।

বিভিন্ন দান-অনুদান গ্রহণ:- কবরস্থানের এই উন্নয়নমূলক কাজের জন্য স্থানীয় বিত্তশালী ব্যক্তি, প্রবাসী এবং সাধারণ জনগণ উদারভাবে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। নতুন কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে এবং দলীয়ভাবে সহায়তা করেছেন। এর মাধ্যমে শুধু আর্থিক সংকটই দূর হয়নি, বরং সবার অংশগ্রহণে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। এই আর্থিক সহায়তা কবরস্থানের সংস্কার ও নতুন অবকাঠামো নির্মাণের কাজকে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করেছে, যা প্রমাণ করে যে একটি সৎ ও স্বচ্ছ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করলে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমর্থন পাওয়া সম্ভব।

স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় দুর্গাপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান এখন এক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন স্থানে পরিণত হয়েছে। তেরি বাজার স্বেচ্ছাসেবক টিমের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এবং নতুন কমিটির কার্যকর ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ অন্যদের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here