ঢাকা, শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে আগামীকাল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ৩১ আগস্ট ২০২৪  

সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে আগামীকাল

সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে আগামীকাল

টানা তিন মাস নিষেধাজ্ঞা থাকার পর বনজীবী ও পর্যটকদের জন্য খুলছে সুন্দরবনের দুয়ার। তাই শুরু হয়েছে নৌকা ও জাল মেরামতের তোড়জোড়। সবকিছু ঠিক থাকলে মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে যেতে পারবেন বনজীবীরা।

একই সঙ্গে সুন্দরবনের গহীনে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরাও। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ সূত্র। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী ও রমজাননগর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চুনা, চুনকুড়ি, মালঞ্চ ও খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে সবাই পুরোনো নৌকা, ছেঁড়া জাল মেরামত ও রঙ করার কাজে ব্যস্ত। তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলোর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলায় চারদিকে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলে ওয়াহেদ গাজী বলেন, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বাদায় (সুন্দরবনে) মাছ-কাঁকড়া ধরার কাজে জড়িত। এখন পর্যন্ত এ পেশায় আছি। বছরের দুটি সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তখন আমাদের অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। মাছ ধরা শুরুর আগে ঋণ করে নৌকা মেরামত ও জাল কিনে নদীতে নামি। তবে মাছ পাওয়ার বিষয়টি ভাগ্যের ওপর। নদীতে নামলে অনেক সময় মাছ পাওয়া যায়, আবার অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হয়। তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিলে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি। তবে সরকার থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটি দিয়ে সংসার চলে না। এ কারণে অন্য কাজ করে উপার্জন করি। সরকার সুন্দরবন ও মাছ-কাঁকড়া রক্ষায় যে অভিযান চালায় সেটি আরো কঠোর এবং নেট জাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধসহ অবৈধভাবে সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের প্রবেশ বন্ধ করা দরকার। তাহলে সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ-কাঁকড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। জেলে আবু হাসান সরদার, জামাল হোসেন ও রফিকুল সরদার জানান, তিন মাস সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া আহরণ থেকে বিরত থাকায় সংসার অনেক কষ্টে চলেছে। কারণ মাছ-কাঁকড়া ধরা ছাড়া তারা অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার; যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ কারণে গত ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য জেলে ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। আগামীকাল ১ সেপ্টেম্ব (রোববার) থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন থেকে বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) হয়েছে ২ হাজার ৯০০টি। বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা এ.বি.এম হাবিবুর রহমান জানান, সাধারণত একটি নৌকায় ২-৬ জন করে মাছ কিংবা কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে ঢুকে থাকেন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেওয়া হবে। এতে করে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। জেলেদের সমস্যা দূর হবে। সুন্দরবন ট্রলার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান জানান, পর্যটকের ওপর নির্ভর করে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় পাঁচশতাধিক ট্রলার চলে। সুন্দরবনে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার পাশাপাশি পর্যটক ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের প্রায় এক হাজার ট্রলারচালক ও শ্রমিক বেকার জীবনযাপন করেন। তাদের সংসার চলে খুব কষ্টে ধার দেনা করে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলে এবার এই রেঞ্জে আসা পর্যটকদের জন্য আধুনিক লঞ্চ সার্ভিস চালু হবে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে সম্পদ আহরণের জন্য ১২ হাজার নৌকা ও ট্রলারকে বোর্ড লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) দেওয়া হয়। এসব নৌযানের মাধ্যমে প্রতিবছর এক থেকে দেড় লাখ জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল সুন্দরবনের সম্পদ আহরণ করেন। এ ছাড়া সুন্দরবনের ৭টি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে প্রতিবছর আড়াই লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, সুন্দরবন শুধু জীববৈচিত্র্য নয়, মৎস্য সম্পদেরও আধার। ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে ও পর্যটকদের সুন্দরবনে ঢোকার পাস (অনুমতি) দেওয়া হবে। নির্ধারিত ফরেস্ট স্টেশনগুলোকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আগে থেকে জেলে–বাওয়ালিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনুমতিপত্রের মেয়াদ অনুযায়ী, জেলেরা সুন্দরবনে অবস্থানকারী জেলেদের তালিকা বনরক্ষীদের ক্যাম্প কর্মকর্তার কাছেও থাকবে। বনরক্ষীরা তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি খালে টহল দিয়ে অনুমোদন পাওয়া জেলের নৌকা যাচাই করে দেখবেন। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, তিন মাস পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে ও বাওয়ালীদের সুন্দরবনে ঢোকার পাস (অনুমতি) দেওয়া হবে। এ জন্য আগে থেকে জেলে বাওয়ালীর পাশাপাশি প্রস্তুতি নিচ্ছেন পর্যটক পরিবহনকারী ট্রলার মালিকরাও।

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়