ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

সাত বছরের মধ্যে শস্য রোপণ, কর্তন ও সংরক্ষণে ৪০ শতাংশ যন্ত্র ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

সাত বছরের মধ্যে শস্য রোপণ, কর্তন ও সংরক্ষণে ৪০ শতাংশ যন্ত্র ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা

সাত বছরের মধ্যে শস্য রোপণ, কর্তন ও সংরক্ষণে ৪০ শতাংশ যন্ত্র ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা

কৃষি উৎপাদন ব্যয় হ্রাস ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কৃষিতে যন্ত্র ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, কৃষিতে যন্ত্র ব্যবহার যত বাড়বে, উৎপাদন ব্যয়ও তত কমবে। তাই যন্ত্র ব্যবহারের সমস্যা খুঁজে সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণে প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এই রোডম্যাপে বলা হয়েছে, শস্য রোপণ ও কর্তনে ২০৩১ সালের মধ্যে ৪০ ভাগ জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনায় ৫০ শতাংশ, সার প্রয়োগে ৩০ শতাংশ, শস্য সংরক্ষণে ৪০ শতাংশ, ভুট্টা কর্তনে ১০ শতাংশ, পচনশীল শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ৩০ শতাংশ, আলু রোপণ ও উত্তোলনে ৩০ শতাংশ, আগাছা নিড়ানিতে ৩০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প স্বচ্ছতার মাধ্যমে পরিচালনা করলে এ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকা যাবে।

বর্তমানে শস্য রোপণে ৬-৮ শতাংশ, জমি কর্ষণে ৯৫ শতাংশ, সেচে ৭৫ শতাংশ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রাক্তন পরিচালক কৃষিবিদ তারিক মাহমুদুল ইসলাম।

কৃষিবিজ্ঞানীরা তথ্য দিয়ে বলেছেন, কেবল যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করার ফলে বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭ শতাংশ গম, ১২ শতাংশ তৈলবীজ, ২৫ শতাংশ শাকসবজি ও আলু, ১২ শতাংশ ডাল শস্য এবং ১০ শতাংশ মরিচ ফসলে কর্তনোত্তর ক্ষতি হয়। এভাবে প্রতিটি শস্যে বিভিন্ন অনুপাতে ক্ষতি হয়। ক্ষতি থেকে বাঁচাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রয়োজন।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিষয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেছেন, বাণিজ্যিক কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চারা ও বীজ রোপণ, ফসল কাটা, প্যাকেজিংসহ সব ক্ষেত্রে যন্ত্র ব্যবহার না করলে সুফল পাওয়া যাবে না।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী কৃষিবিদ ড. মাসুদুল হক ঝন্টু বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে জন্য ব্যাংক ঋণ দিয়ে সহায়তা করতে হবে। কৃষককে সর্বোচ্চ ভর্তুকি মূল্যে হারভেস্টার দিতে হবে। শ্রমিকদের পেশা পরিবর্তন, নতুন কৃষি শ্রমিক গড়ে না ওঠা, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশের বাইরে কাজের সুযোগ তৈরিসহ নানা কারণে এখন কৃষি শ্রমিকের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে এই সংকট দূর করতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সব উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ৩ হাজার ২০ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি প্রকল্প। যে প্রকল্পটি কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য কাজ করছে। পাঁচ বছর মেয়াদের প্রকল্পটি আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত চলবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকের খরচ কমাতে ১২ ক্যাটাগরির কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা। হাওড় ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ ও সমতলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকির মাধ্যমে বিতরণ করছেন এসব যন্ত্রপাতি। প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪ জেলার ৫০০টি উপজেলায় ৫ বছরে ১২ ক্যাটাগরির ৫১ হাজার ৩০০ কৃষিযন্ত্র সরবরাহ করার কথা রয়েছে।

কৃষিতে যান্ত্রিকীরণের সুফল কীভাবে পাওয়া যাচ্ছে তার একটি তথ্য দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তারা বলছে, কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটায় শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরেই কৃষকের ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। হারভেস্টারের ব্যবহার বেড়েছে ২ হাজার শতাংশ। উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক মাত্রায় যান্ত্রিকীকরণ করা গেলে শস্যের অপচয় কমিয়ে ৫ শতাংশে আনার মাধ্যমে প্রায় ৩২ লাখ টন শস্যের অপচয় রোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন বলেন, জলবায়ু দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের কোনো বিকল্প নেই। তাই দেশে কী পরিমাণ যন্ত্র ব্যবহারে কোথায় বাধা রয়েছে তা খুঁজে সমাধান করতে হবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে যন্ত্র দিয়ে ধান কর্তনের পরিমাণ ছিল ৪ শতাংশ। সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ শতাংশেএ উন্নীত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়