ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ

বেতন, হাজিরা বোনাস, ভাতা বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবিতে পাঁচ দিন আগে সাভার ও গাজীপুরে দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ। নানা উদ্যোগে গাজীপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও সাভারের আশুলিয়ায় এখনও অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিল্পাঞ্চলে হঠাৎ এমন পরিস্থিতির নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, তা খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা।

শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে গতকাল শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা। বৈঠকে পোশাক খাতে অস্থিরতা নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল মধ্যরাতে সাভার ও গাজীপুরে শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর ‘ব্লক রেইড’। প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, শ্রমিক বিক্ষোভের নামে আর নৈরাজ্য করতে দেওয়া হবে না। ভাঙচুর, নাশকতায় জড়ালে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করবে পুলিশ। এরই মধ্যে সাভারে নেওয়া হয়েছে বাড়তি পুলিশ ফোর্স। আজ শনিবার কারখানা খোলার পর যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে যৌথ বাহিনী। 

শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে গত বৃহস্পতিবার আশুলিয়ায় বন্ধ ছিল ১২৯টি কারখানা। বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বিকেলে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অস্থিরতা নিরসনে শ্রমিক ও মালিক কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে একমত হয়েছে। বৈঠকে শ্রমিক নেতারা বলেন, কিছু কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি কারখানায় নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার দাবি করেন তারা। এ সময় কারখানা মালিকরা তাদের বলেন, নতুন শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে, তবে আগে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত করতে হবে।’ 

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) রেজাউল করিম বলেন, পোশাক খাত আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন। এ খাত ঘিরে যারা অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু কারখানায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের ধরতে ব্লক রেইড ও যৌথ অভিযান চলছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, যারা শিল্পাঞ্চলে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকের নাম পেয়েছে এবং তাদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ছাড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ২০০’র বেশি সদস্যকে সাভারে নেওয়া হয়েছে। 

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, কারখানা মালিকের অনেকে মনে করেন, শ্রমিকদের একটি পক্ষ দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি তুলছে। কেউ কেউ তাদের ইন্ধন দিচ্ছে। ঝুট ব্যবসা ঘিরে নতুন গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তারাও শ্রমিকদের উস্কে দিতে পারে। এ অবস্থায় পুরো আশুলিয়া এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় নেওয়ার পরামর্শ আসে বৈঠকে। বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে যাতে ভুল বার্তা না যায়– সেদিকে মনোযোগী হওয়ার কথা বলেন পোশাক কারখানার মালিকরা।

সব কারখানায় একই দিনে বেতন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। কারণ একই এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কারখানায় আগে-পরে বেতন দেওয়া হলে শ্রমিকদের মধ্যে ভুল বার্তা যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। যেসব শ্রমিকের একাধিক কারখানার আইডি কার্ড রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করার পরামর্শ আসে বৈঠকে। 
একটি পোশাক কারখানার কর্ণধার বলেন, ‘শ্রমিক পরিচয়ে কারখানায় ঢুকে এরই মধ্যে কয়েকজন স্টাফকে বেদম মারধর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’ এলাকার নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতাদের শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে কাজে লাগাতে হবে বলে মনে করেন তিনি। শ্রমিকদের যারা বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন, তাদেরও কীভাবে এতে যুক্ত করা যায়, সেটি ভেবে দেখার পরামর্শ দেন।

আটক ১৪ জন
সাভারে অভিযানে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী তাদের আইনের আওতায় নেয়। এ ছাড়া গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক হন তিনি।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশুলিয়ায় বিভিন্ন কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে আশুলিয়া থেকে এবং তিনজনকে সাভার থেকে আটক করা হয়। আটকদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ও যাচাই-বাছাই চলছে।’

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে গাজীপুরের শিল্প এলাকা, টঙ্গী ও কোনাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক তৈরি কারখানায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কোনাবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী এলাকার নিরাপত্তাকর্মী মনিরুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে।’ 

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়