ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিশেষ মুজিজা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিশেষ মুজিজা

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিশেষ মুজিজা

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। আমি ক্ষুধার জ্বালায় পেট মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কোনো সময় ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদিন আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে নবী করিম (সা.) ও সাহাবিদের বের হওয়ার পথে বসে থাকলাম।

অতঃপর আবু বকর (রা.) যেতে লাগলে আমি কোরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশ্যে যে তিনি তাহলে আমাকে পরিতৃপ্ত করে কিছু খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর ওমর (রা.) যাচ্ছিলেন।

আমি তাকে কোরআনের একটি আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। এ সময়ও আমি প্রশ্ন করলাম এ উদ্দেশ্যে যে তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমার কোনো ব্যবস্থা করলেন না।

পরক্ষণে মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন এবং আমার মধ্যকার অস্থিরতা বিরাজমান এবং আমার চেহারার অবস্থা থেকে তিনি তা আঁচ করতে পারলেন। তারপর বলেন, হে আবু হুরায়রা, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি হাজির। তিনি বলেন, তুমি আমার সঙ্গে চলো। এ বলে তিনি চলেন, আমিও তার অনুসরণ করলাম।

তিনি ঘরে ঢোকার অনুমতি চাইলেন এবং আমাকেও ঢোকার অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালার মধ্যে কিছু পরিমাণ দুধ পেলেন। তিনি বলেন, এ দুধ কোথা থেকে এসেছে? তারা বলেন, এটা আপনাকে অমুক পুরুষ অথবা অমুক নারী হাদিয়া দিয়েছে। তখন তিনি বলেন, হে আবু হুরায়রা, আমি বললাম, জি, হুজুর! তিনি বলেন, তুমি সুফফাবাসীদের কাছে গিয়ে তাদের আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। বর্ণনাকারী বলেন, সুফফাবাসীরা ইসলামের মেহমান ছিলেন। তাদের কোনো পরিবার ছিল না এবং তাদের কোনো সম্পদ ছিল না এবং তাদের কারো ওপর নির্ভরশীল হওয়ারও সুযোগ ছিল না। যখন কোনো সদকা আসত তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি এর থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যখন কোনো হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদের দিয়ে দিতেন এবং এর থেকে নিজেও কিছু রাখতেন। এর মধ্যে তাদের শরিক করতেন। এ আদেশ শুনে আমার মনে কিছুটা হতাশা এলো। মনে মনে ভাবলাম যে এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কী হবে?

এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমি শরীরে কিছুটা শক্তি পেতাম। এরপর যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন যে আমি যেন তা তাদের দিই। আমার আর আশা রইল না যে এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ না মেনে কোনো উপায় নেই। তাই তাদের কাছে গিয়ে তাদের ডেকে আনলাম। তারা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাদের অনুমতি দিলেন। তারা এসে ঘরে আসন গ্রহণ করল। তিনি বলেন, হে আবু হুরায়রা, আমি বললাম, আমি হাজির, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেন, তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদের দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তা পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালা আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এভাবে দিতে দিতে দিতে নবী করিম (সা.) পর্যন্ত পৌঁছলাম। তারা সবাই তৃপ্ত হয়েছিলেন।

তারপর নবী করিম (সা.) পেয়ালাটি নিজ হাতে নিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। আর বললেন, হে আবু হুরায়রা, আমি বললাম, আমি হাজির হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেন, এখন তো আমি আর তুমি আছি। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি ঠিক বলছেন। তিনি বলেন, এখন তুমি বসে পান করো। তখন আমি বসে কিছু পান করলাম। তিনি বলেন, তুমি আরো পান করো। আমি আরো পান করলাম। তিনি বারবার আমাকে পান করার নির্দেশ দিতে লাগলেন। আমি বলতে বাধ্য হলাম যে আর না। আল্লাহর কসম! (আমার পেটে) আর পান করার মতো জায়গা আমি পাচ্ছি না। তিনি বলেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালা তাকে দিয়ে দিলাম। তিনি আলহামদুলিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে বাকিটা পান করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০০৮)

সুবহানাল্লাহ! এক পেয়ালা দুধ সবাই পান করলেন। এই হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিশেষ মুজিজা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়