যে রকম হতে পারে পুলিশের নতুন ইউনিফর্ম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে। অভ্যুত্থান শেষে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসব ঘটনায় ৪৪ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়। এরপর সারাদেশে বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল পুলিশের কার্যক্রম। পুলিশের ইমেজ ফেরাতে নেয়া হয় ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের নতুন ইউনিফর্মের জন্য এখন পর্যন্ত ৬টি রং সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এছাড়া ২০টি লোগোও বাছাই করা হয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে চূড়ান্ত করা হবে ইউনিফর্মের রং ও লোগো। তবে হালকা ধূসর (লাইট গ্রে) বা হালকা নীল (লাইট ব্লু) নির্ধারণের সম্ভাবনা বেশি।

জানা গেছে, পুলিশের ইউনিফর্ম পরিবর্তন ও লোগো পরিবর্তনের বিষয়ে গঠিত কমিটি এখন পর্যন্ত তিনটি সভা করেছে। সর্বশেষ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দফতরে। কমিটির সব সদস্য সেদিন উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের ইউনিফর্ম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রং কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনেকগুলো রঙের বিষয়ে আলোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত ৬টি রং শর্টলিস্টেড করা হয়েছে। রং চূড়ান্তের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হচ্ছে অন্য বাহিনীর ইউনিফর্মের রংও। যেন পুলিশের নতুন পোশাকের রং দেশের অন্য সব বাহিনীর সঙ্গে যেন না মিলে যায় সেটি দেখা হচ্ছে। এছাড়া অন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করে রং চূড়ান্ত করার কাজ চলমান রয়েছে।

কমিটি সূত্রে জানা যায়, পুলিশের ইউনিফর্মের জন্য বাছাই করা রঙের মধ্যে রয়েছে হালকা নীল, হালকা ধূসর ও হালকা সবুজ। অনেকগুলো ডিজাইনে নীলের মতো বেশ কয়েকটি রং দেখা হয়েছে। রং চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে হালকা রঙের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কমিটি।

জানা গেছে, রং চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর সেই অনুযায়ী কাপড় বানানো হবে। কাপড় বানানোর পর সেটি পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই কি না তা পরীক্ষা করা দেখা হবে। সেই সঙ্গে কাপড়ের মানও দেখা হবে। এছাড়া কাপড় পরীক্ষায় নতুন ইউনিফর্মের রং বাহিনীর জন্য উপযুক্ত কি না এবং সদস্যরা সেই পোশাক পরে আরামদায়ক অনুভব করছেন কি না এসবও দেখা হবে। ইউনিফর্মের রং চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যাজ ডিজাইন করা হবে। পোশাকের রঙের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ব্যাজ রং চূড়ান্ত করা হবে।

রং চূড়ান্তের পর ঠিক করা হবে ডিজাইন
কমিটি সূত্রে জানা যায়, যেহেতু ইউনিফর্মের রং এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করা হয়নি সেক্ষেত্রে কমিটি এখনই পোশাকের ডিজাইন চূড়ান্ত করতে পারছে না। তবে এরই মধ্যে পোশাকের জন্য বেশ কয়েকটি ডিজাইন দেখা হয়েছে। এসব ডিজাইন এখনই চূড়ান্ত করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। রং চূড়ান্ত হওয়ার পর ডিজাইন চূড়ান্ত করা হবে।

ইউনিফর্ম ক্যামোফ্লাজ হবে নাকি প্লেন ডিজাইনের হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

লোগোর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ইউনিফর্ম পরিবর্তনের পাশাপাশি বাহিনীর লোগো পরিবর্তনের জন্যও দাবি উঠেছে। লোগো পরিবর্তনের জন্যও কাজ করছে এই কমিটি। কমিটির দ্বিতীয় মিটিংয়ে ৪০টির মতো লোগো নিয়ে আলোচনা হয়। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এই ৪০টি লোগো কমিটির কাছে আসে। দ্বিতীয় মিটিংয়ে ৪০ লোগোর মধ্যে ২০টিকে শর্টলিস্ট করা হয়। এর মধ্য থেকে একটি লোগো চূড়ান্ত করা হবে।

ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তন কমিটির সদস্য পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট রেভিনিউ) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম বলেন, পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের বিষয়ে কাজ চলমান রয়েছে। কত সময় লাগবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কমিটি নতুন পোশাক ও লোগো চূড়ান্ত করার পর সিনিয়র অফিসারদের দেখানো হবে। এরপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এসব কাজ শেষ হতে এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে। চূড়ান্ত হওয়ার পর আবার যদি পোশাক ও লোগোর বিষয়ে পরিবর্তনের সুপারিশ আসে, সেগুলো পরিবর্তন করে কাজ শেষ করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করছি পোশাক ও লোগো যেন আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের পুলিশ বাহিনীর মতো হয়।

এ বিষয়ে আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের জন্য আমরা একটা কমিটি গঠন করেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। এ বিষয়ে কমিটি একাধিক প্রতিবেদন দেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে নতুন পোশাক চূড়ান্ত করে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।