ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১ ১৪৩১

বিশৃঙ্খলা করলেই কঠোর ব্যবস্থা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

বিশৃঙ্খলা করলেই কঠোর ব্যবস্থা

বিশৃঙ্খলা করলেই কঠোর ব্যবস্থা

দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বৈরাচারবিরোধী ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন করতে গিয়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। একের পর এক হামলা-মামলা, গ্রেফতারে জর্জরিত, গুম-খুনে নিঃশ্ব হয়েছে জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনেক পরিবার। ক্ষমতাসীনদের রোষানলের শিকার হয়ে কারাবন্দী হতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে, নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো। দলের শীর্ষ নেতা থেকে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের কারাগারে যাওয়া-আসা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তাদের কাটতো আদালতের বারান্দায়। এমন অবস্থায়ও দলটির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও আস্থা রেখে সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন বিএনপির পতাকাতলে। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে। যার সর্বশেষ পরিণতি ঘটে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে। ওইদিন স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তার দলের নেতাকর্মীদের ফেলে রেখে পালিয়ে যান ভারতে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী হত্যা করা হবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার সেই আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করেছে তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি। বরং পুলিশের অনুপস্থিতিতে সারাদেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করেছে নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, দীর্ঘদিনের নির্যাতনে আওয়ামী লীগের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু হাসিনা সরকারের পতনের পর দলের পক্ষ থেকে শান্ত থাকার এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সতর্ক করে দেওয়া হয় দল থেকে। বরং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে নেতাকর্মীরা। খোঁজ নিয়েছেন চিকিৎসার, প্রদান করা হয়েছে আর্থিক সহযোগিতাও। একইভাবে সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় দলগতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে। আবার এই নির্দেশনা অমান্য করে যে ক’জন জড়িত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে কঠোর শাস্তিও। দল থেকে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ করা হয়েছে বহিষ্কার।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর পরই দলের পক্ষ থেকে সকলকে শান্ত থাকা, কোন ধরণের বিশৃঙ্খলায় সম্পৃক্ত না হওয়া, যেকোন ধরণের নৈরাজ্য প্রতিরোধ করা এবং দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও স্বস্তি ফেরাতে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকেই নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার বার্তা দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দিয়েছেন একই বার্তা। এছাড়া তিনি ধারাবাহিকভাবে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে করছেন বৈঠক। প্রতিটি বৈঠকেই দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিচ্ছেন কোন ধরণের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় জড়িত হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। অনেক ক্ষেত্রে সেটি নিশ্চিতও করা হয়েছে। দলের নামে চাঁদাবাজী কিংবা দখলে জড়িত হলে তাদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিগত দেড় দশক ধরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির আত্মত্যাগের ফলে সারাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করছে দলটি। এমন অবস্থায় কারো কোন ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে যাতে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয় সে বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো থেকে সর্বস্তরে কঠোর বার্তা দেওয়ার পর এবার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিজে কথা বলছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রতিদিনই তিনি বিভাগ কেন্দ্রীক নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে নেতাকর্মীদের দিচ্ছেন নানা দিক নির্দেশনা।

গতকাল শনিবার তিনি বৈঠক করেন ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। এসময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিকট অতীতে স্বৈরাচার ছিল দৃশ্যমান গণ নিপিড়নকারী, আর এখন স্বৈরাচারের দোসররা অদৃশ্য শক্তিরূপে জনতার বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান প্রতিপক্ষের চাইতে অদৃশ্য শত্রু অনেক বেশি ভয়ংকর। দৃশ্যমান প্রতিপক্ষকে আমরা চিনি, তাদের আক্রমণের ধরনও আমাদের পরিচিত কিন্তু অদৃশ্য শত্রুরা অচেনা আর সর্বত্র, তাদের অবস্থান অন্ধকারে আর তাদের কৌশলও চোরাগোপ্তা। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। তৃণমূল সতর্ক নজরদারি রাখলে কোন ষড়যন্ত্রকারীই দলের সুনাম ক্ষুন্ন করতে পারবে না বলেও তিনি নিশ্চিত আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একই সাথে তিনি দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী সকল অদৃশ্য ও দৃশ্যমান শক্তিকে প্রতিহত করতে তৃনমূলকে সজাগ, ঐক্যবদ্ধ এবং সর্বোচ্চ সর্তক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার রাজশাহী জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, আগামী নির্বাচন হবে একটি কঠিন পরীক্ষার নির্বাচন। বিএনপি গত সতের বছর ধরে শত জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করে যেভাবে জনগণের আস্থা ধরে রেখেছে তার ধারবাহিকতা রাখতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি›র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এমন কোন কাজ করা যাবে না যা জনগণের আস্থা নষ্ট করে। জনসম্পৃক্ত থেকে জনগনের আস্থা অর্জন ও সেটা অক্ষুণ্ন রাখতে তৃণমুল নেতাকর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে থেকে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগীয় জেলাগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়ও তারেক রহমান একই ধরণের বার্তা দেন।

বিএনপি সূত্রে আরো জানা যায়, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বিগত সরকারের সুবিধাভোগী অনেকেই এখন মুখোশ খুলে বিএনপির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলছে। দলেই কোন কোন নেতা এসব হাইব্রিডকে আশ্রয়ও দিচ্ছেন নেতাকর্মীর বহর বাড়াতে। তাদের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে সর্তক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেসব নেতা এসব হাইব্রিডদের জায়গা দিচ্ছে তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে গুলশনা কার্যালয়ে। দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বেশকিছু অনিময়, অপ্রীতিকর এবং দলের নীতিবিরুদ্ধ ঘটনা ঘটেছে যার বেশিরভাগই বিএনপিতে সাম্প্রতিক সময়ে অনুপ্রবেশকারী ঘটিয়েছে। আবার কয়েকটি ঘটনায় দলের নেতাকর্মীরাও জড়িত আছে। তবে যারাই এসব ঘটনার সাথে জড়িত আছেন তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের ব্যবহৃত ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহায়তার অভিযোগ উঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় গতকালই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের কারণে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পদাবনতী, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিন, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পদ স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে অর্ধশতাধিক জনকে এবং পদ স্থগিত করা হয়েছে আরো বেশকিছু নেতাকর্মীর।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এরই মধ্যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তারপরও কিছু জায়গায় শৃঙ্খল ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে সুস্পষ্ট অভিযোগ আসছে সেখানেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেসব জেলাতেই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোন অভিযোগ এসেছে সেগুলো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এক্ষেত্রে তৃণমূল কিংবা কেন্দ্রীয় নেতা ছাড় দেয়া হয়নি কাউকেও।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বড় কিছু অর্জন করতে হলে ছোট কিছু হারাতে হয় এবং হারানোর সেই উদাহরণ আমরা ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে সৃষ্টি করেছি। আমরা আমাদের দলের একজন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ স্থগিত করেছি। দলের চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই ধরনের বার্তা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চাঁদাবাজদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ যদি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতে আসে, তবে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। তিনি বলেন, কিছু মিডিয়ায় বিএনপির নামে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে- এসবের সঙ্গে বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই। 

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়