কৃচ্ছ্রসাধনে পরিচালন বাজেটও কমবে

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার

কৃচ্ছ্রসাধনে পরিচালন বাজেটও কমবে

কৃচ্ছ্রসাধনে পরিচালন বাজেটও কমবে

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের পরিচালন বাজেটও কাটছাঁট করবে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দুই মাসের মাথায় বাজেটে বড় ধরনের এই কাটছাঁট হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে ঠিক কত কমানো হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর কম গুরুত্বপূর্ণ এক খাতের টাকা নিয়ে খরচ করা হতে পারে দরকারি অন্য খাতে।জানা যায়, দেশের বেসরকারি খাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ছন্দঃপতনে মন্থর গতি চলছে। ক্রমাগত নেতিবাচক অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছে সরকার। আগের সরকারের দায়ের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভের চাপ আছে। বিশেষ করে রপ্তানি আয় কমায় চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

চলতি মাসে প্রবাস আয়ে কিছুটা গতি এলেও সার্বিকভাবে ব্যবসা ও বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। রাজস্ব আয়ও বাড়ছে না। অন্যদিকে সরকারের কাঁধে আগের সরকারের রেখে যাওয়া বড় অঙ্কের ঋণের বোঝা। এ অবস্থায় নতুন করে ব্যয় বাড়ানোর ঝুঁকি নেবে না সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল ও কাটছাঁটের পাশাপাশি পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কিছু ব্যয় স্থগিত, কমানো ও বিদেশভ্রমণ সীমিত করা আছে। চলতি বছরে কোনোভাবেই বাজেট ঘাটতি বাড়াবে না। নতুন করে পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরো কঠোর হতে পারে সরকার। তবে বিদ্যমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রয়োজন অনুযায়ী জরুরি ব্যয় মেটাতে একই মন্ত্রণালয়ের এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করা হতে পারে।

বাজেট সংশোধনের চিন্তা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চলতি মাসে বা আগামী মাসে বাজেট রিভাইজ বা সংশোধন করা হতে পারে।

অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠক তার আগেই হবে। তবে সুনির্দিষ্ট সময় জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। তবে জানান, বাজেটে উন্নয়ন খাতের বড় প্রকল্পগুলোর বিষয়গুলোতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অহেতুক অপচয় বা ব্যয়ের বিষয়টি যুক্তি সংগত করতে খতিয়ে দেখা যাবে। প্রকল্পের বিষয়গুলো পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দেখবেন। বড় বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার দায়িত্ব তাঁর। তবে তাঁর সঙ্গে ইআরডির সম্পর্ক আছে বিদেশ থেকে অর্থ আনার বিষয়টি। কতগুলো পাইপলাইনে আছে তা দেখতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ছোট ছোট বিষয়গুলো দেখবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ব্যয় কত কমবে তা আগে সুনিশ্চিত করে বলা মুশকিল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় কমাতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনার ভিত্তিতে তারা ব্যয় কাটছাঁট করে ব্যয় সীমিত করবে। বাজেটে ব্যয় কমানোর বিষয়ে চলতি মাসে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এখন ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে সরকার ব্যাবসায়িক আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দুর্নীতি দমন করবে। ব্যবসায় ব্যয় বৃদ্ধির কারণ দূর করা হবে। ব্যাংকিংসহ ব্যাবসায়িক খাতে দ্রুত গতিশীলতা ফিরে আসবে। ফলস্বরূপ, পুরো অর্থনীতি শিগগিরই কার্যকরভাবে পরিচালনা শুরু হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ব্যবসার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে। সরকার ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করবে। যত দ্রুত ব্যবসা সক্রিয় হবে, তত রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থান দমন করার নামে বিগত সরকারের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রের সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মোতায়েন এবং তাদের যানবাহন ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া অনেক সরকারি ভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, এই ক্ষতি মোকাবেলায় অবকাঠামো সংস্কার, যন্ত্রপাতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। আপাতত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে এসব লোকসান মেটানোর পরামর্শ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ব্যয়ের প্রাক্কলন অনুমোদন করে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকার যদি এক লাখ টাকা কমানো হয়, তাহলে মূল বাজেট থেকে সংশোধিত বাজেট কমবে সাড়ে ১২ শতাংশেরও বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটের আকার কমানো হয়েছিল ৬.২২ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২.৫৯ শতাংশ বাজেট সংশোধন করা হয়। তবে বাস্তবায়ন অদক্ষতায় তা অর্থবছরের শেষের দিকে করা হয়। তবে এবার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিশেষ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার এসেই সংস্কারে হাত দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাজেটটিও তারা বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুতই সংশোধন করবে বলে জানা গেছে।