অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আগামী বুধবার থেকে যৌথ অভিযান

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আগামী বুধবার থেকে যৌথ অভিযান

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আগামী বুধবার থেকে যৌথ অভিযান

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে পাঁচ শতাধিক থানায় হামলা চালিয়ে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয়। এর মধ্যে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন হাজার ৮৮০টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় সদর দপ্তর। বেশির ভাগ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের হাতেও অনেক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে।

দেশে হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আগামী বুধবার থেকে সারা দেশে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

অবৈধ অস্ত্রের সঠিক তথ্য নেই

দেশে বর্তমানে কী পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে। এসব অবৈধ অস্ত্র মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এলাকায় আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজিতে ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা।

বৈধ অস্ত্র ৫০ হাজার

পুলিশের ভাষ্য মতে, বর্তমানে দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে ব্যক্তির হাতে ৪৫ হাজার ২২৬টি অস্ত্র রয়েছে।এর বাইরে প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঁচ হাজার ৮৪টি অস্ত্র রয়েছে। ব্যক্তিগত অস্ত্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছে সাত হাজার ৫৪৯টি এবং বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে রয়েছে দুই হাজার ৫৮৭টি অস্ত্র। জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীর কাছে রয়েছে ৭৯টি অস্ত্র।

এসব অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল, রিভলবার, একনলা ও দোনলা বন্দুক, শটগান, রাইফেল রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১১ হাজার ৮৯৮টি।

এরপর রাজশাহীতে আট হাজার ৩২১টি, খুলনায় সাত হাজার ৪৭৯টি, চট্টগ্রামে ছয় হাজার ৫১২টি, সিলেটে চার হাজার ৭৫৭টি, রংপুরে তিন হাজার ৫৯৭টি, বরিশালে দুই হাজার ৬৮২টি এবং ময়মনসিংহে দুই হাজার ১১৮টি।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে পুলিশ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের ৫ নির্দেশনা

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের যৌথ অভিযান নিয়ে পুলিশ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের পাঁচটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার এ নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পাঁচটি নির্দেশনায় বলা হয়, স্থগিত করা লাইসেন্সের তালিকা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স গ্রহীতাকে এসএমএসের মাধ্যমে লাইসেন্স স্থগিত এবং স্থগিত করা লাইসেন্সের অনুকূলে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দেওয়ার বিষয়টি অবহিত করতে হবে।

লাইসেন্স স্থগিত ও সংশ্লিষ্ট অস্ত্র-গোলাবারুদ থানায় জমা দেওয়া এবং ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা ও অবৈধ অস্ত্র সংরক্ষণ বা হেফাজতকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য সদস্যদের সমন্বয়ে কোর কমিটির সভা করবেন। সভায় স্থগিত করা লাইসেন্সের তালিকা পর্যালোচনা করবেন। ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সমন্বয়ে যৌথ অপারেশন টিম গঠন করে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনাররা সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রণীত স্থগিত করা লাইসেন্সধারীদের তালিকা এবং নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত জমা করা অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের তালিকা ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই বিভাগে প্রেরণ করবেন।

যা বলছে ডিএমপি

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র বলছে, সরকার পরিবর্তনের পর রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে এক হাজার ৮৯৮টি অস্ত্র লুট করা হয়। ভবন, ফাঁড়িসহ এ সময় ১৪২টি স্থাপনায় আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয়। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বাকি এক হাজার ৪৪৫টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।

বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত

গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (কর্মরত সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা ছাড়া) স্থগিত করা হলো। তাঁদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে থানা ও কারাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এর আগে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর এই আহবান জানায়।