সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র জমার সময় বাড়ছে তিন মাস

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ০২:২৫ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোববার

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র জমার সময় বাড়ছে তিন মাস

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র জমার সময় বাড়ছে তিন মাস

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গত ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এর আগেও দরপত্র আহ্বান করা হলেও তেমন একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করতে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) আকর্ষণীয় করে সমুদ্রের ২৪টি ব্লক ইজারা দেওয়ার লক্ষ্যে এ দরপত্র দরপত্র আহ্বান করা হয়। ফলে বিশ্বের নাম করা কোম্পানিগুলো সারা দিয়েছে।

ইতিমধ্যে ৭টি কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানি জয়েন্ট ভেঞ্জারে দরপত্র জমা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে সময় চেয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু গত জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, হাসিনা সরকারের পতন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ পরবর্তী সময়ে কাজ অনেকটা থমকে যায়। এ ছাড়া আগ্রহী কয়েকটি কোম্পানিও সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে দরপত্র জমা দেওয়ার সময় আরও তিন মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা। সে হিসাবে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়া যাবে। চলতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিষয়টি অনুমোদন দিলেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। পেট্রোবাংলার একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পেট্রোবাংলা বলছে, আকর্ষণীয় পিএসসির কারণেই সমুদ্রে বিদেশি কোম্পানির আগ্রহ বেড়েছে। বিশে^র শীর্ষ তেল-গ্যাস কোম্পানি প্রতিযোগিতা করবে। তিন মাস সময় বাড়ানোর পর আর সময় বাড়ানো হবে না। এসব আবেদন মূল্যায়ন চলবে পুরো ২০২৫ সাল পর্যন্ত। ২০২৬ সালে চূড়ান্ত হতে পারে অনুসন্ধানকারী কোম্পানি। ২০২৭ সাল নাগাদ খনন কার্যক্রম শুরু হলেও সমুদ্রসীমা থেকে প্রাপ্ত গ্যাসের সুফল পাওয়া যাবে ২০৩২ সালে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক দরপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পেট্রোবাংলা জানায়, ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। বাংলাদেশের পাশের ব্লক থেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস উত্তোলন করছে মিয়ানমার। যে কারণে বাংলাদেশ অংশে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত, এমনটাই বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এর আগে দরপত্র আহ্বান করা হলেও পিএসসি লাভজনক নয় উল্লেখ করে দরপত্রে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো।

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। এর প্রেক্ষিতে আগের চেয়ে সুবিধা বাড়িয়ে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ৯টি ব্লকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কোনো কোম্পানি এক বা একাধিক ব্লকে অংশ নিতে পারবে। ৯টি সংবাদপত্রের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সব দূতাবাসে জানানো হয়েছে। ৫৫টি বিদেশি কোম্পানিকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমেরিকান কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও এক্সোন মবিল, জাপানি প্রতিষ্ঠানসহ অনেক কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতিমধ্যে ৭টি কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছে।

এবার বেশ কিছু নতুন দিক আছে পিএসসিতে। বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযোগী করে পিএসসি তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে অনুসন্ধান কূপের বাধ্যবাধকতা নেই। বিনিয়োগের খরচ বছরে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত উদ্ধারের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে ঠিকাদার কোম্পানি দ্রুত বিনিয়োগ তুলতে পারবে। আবার বিনিয়োগ তোলার পর পেট্রোবাংলার লভ্যাংশ বাড়বে। গ্যাসের দাম একই না রেখে ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েলের দামের ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বিশ^বাজার বুঝে গ্যাসের মূল্য বাড়বে বা কমবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, যেসব দরপত্র জমা পড়েছে সেগুলো ছাড়া বেশ কয়েকটি কোম্পানি দরপত্র অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা যোগাযোগ রাখছে। কিছু কোম্পানি জয়েন্ট ভেঞ্চারে দরপত্রে অংশ নিতে যায়। এসব কোম্পানি জমাদানের জন্য সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। সে জন্য জমা দেওয়ার সময় তিন মাস বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর আর সময় বাড়ানো হবে না।

তিনি বলেন, প্রস্তাবনাটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অনুমোদন দিলেই চলতি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। দরপত্র জমা পড়ার পর মূল্যায়ন, অনুমোদন হবে, প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন কাজ পাওয়া কোম্পানি কূপ খনন করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই পেট্রোবাংলা কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ ওয়েবসাইটে ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন ছেপে দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। এতে বলা হয়, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার মধ্যে আগ্রহী তেল-গ্যাস কোম্পানিকে দরপত্র জমা দিতে হবে। দরপত্রে অংশ নিতে হলে নিজ দেশের বাইরে ভিন্ন দেশে অন্তত একটি কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দিনে অন্তত ১৫ হাজার ব্যারেল তেল বা ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের অভিজ্ঞতা লাগবে। অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) ১০ শতাংশ মালিকানা সংরক্ষিত থাকবে।