সৌর বিদ্যুতের ৩১টি প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ১২:২৮ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোববার

সৌর বিদ্যুতের ৩১টি প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

সৌর বিদ্যুতের ৩১টি প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া ৩১টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের বিশেষ আইনের অধীনে নেওয়া এসব প্রকল্পের বিপরীতে এরই মধ্যে আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট-এলওআই) দেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত বিশেষ আইনে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রকল্পগুলো নেওয়ার কারণে সরকার বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি এসব প্রকল্পের অধিকাংশেরই মালিক ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। প্রকল্প বাতিলের বিষয়টি চলতি সপ্তাহে উদ্যোক্তাদের জানানো হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সৌর বিদ্যুতের ৩১টি প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের কথা শিগগির উদ্যোক্তাদের জানিয়েছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্রকল্পও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ ভবনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশেষ আইনে নেওয়া ৩১টি সৌর বিদ্যুতের প্রকল্পের বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৬৪৫ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বর্তমানে চালু থাকা রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ১২টি কেন্দ্রের সম্মিলিত ক্ষমতা ৯৫২ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বাতিল করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। কারণ এসব কেন্দ্র এখন ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ প্রক্রিয়ায় চলছে। এ ছাড়া সবকটি কেন্দ্র বর্ধিত মেয়াদে চালানো হচ্ছে। ফলে তাদের কাছ থেকে ইলেকট্রিসিটি না কিনলে কোনো পেমেন্ট দিতে হবে না। তবে রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বাতিলের সিদ্ধান্ত এখনই উদ্যোক্তাদের জানানো হবে না। খানিকটা সময় নিয়ে তা বাতিল করা হবে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সৌর বিদ্যুতের প্রকল্পগুলো বাতিলের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। কারণ এই ৩১টি প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের অনেকেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে সিকিউরিটির টাকা জমা দিয়েছেন। ফলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

জানা গেছে, বিশেষ আইনে অনুমোদিত সৌর বিদ্যুতের প্রকল্পগুলোর অনুমোদনের বিপরীতে ঘুষ লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এই সব কেন্দ্রই আওয়ামী লীগের নেতা ও ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মতো সৌরবিদ্যুতের প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে লুটপাট করার জন্য। কারণে উদ্যোক্তা অনেকেই কেন্দ্র নির্মাণে জমির ব্যবস্থা ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারেননি।

বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে অফ-গ্রিড উৎস থেকে ৩৮০ মেগাওয়াট উৎপাদিত হচ্ছে। বাকি বিদ্যুৎ গ্রিডে যোগ হচ্ছে।

কনজ্যুমার অ্যাসোশিয়েন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ভোক্তাদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই প্রকল্পগুলো বাতিল করলে তা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শুল্কের অযৌক্তিক বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। সরকারের উচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের দ্রুত বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের অধীনে অনুমোদিত সমস্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করা।