বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নেত্রকোনার সন্তান যতীন সরকার আর নেই

5

দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

যতীন সরকারের ছেলে সুমন সরকার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বেশ কয়েক মাস ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এখন লাশ হাসপাতালেই আছে। সেখান থেকে জেলার উদীচী কার্যালয়ে বিকাল ৪টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। পরে সেখান থেকে নিজ জেলা নেত্রকোণায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।

যতীন সরকার দীর্ঘদিন ধরে পলি আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন। কয়েক মাস আগে বেশ কিছু শারীরিক জটিলতায় তার শরীরে অস্ত্রোপচারও করা হয়। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন।

গত জুনে শোবার ঘরের সামনে বারান্দা থেকে পত্রিকা আনতে গিয়ে তিনি পড়ে যান এবং রাইট ফিমার নেক ফ্র্যাকচার হয়।

উল্লেখ্য, যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দ্রপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।

৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে চলে যান নিজ জেলা নেত্রকোনায়।

তার প্রথম গ্রন্থ ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ‘মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’। এ প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর পাশাপাশি শিশুদের জন্য সুপাঠ্য একটি ব্যাকরণ গ্রন্থও রচনা করেন তিনি। বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এবং ব্যাকরণ গ্রন্থের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালার মধ্যে চারটি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। যথাক্রমে- ‘কেদারনাথ মজুমদার’, ‘চন্দ্রকুমার দে’, ‘হরিচরণ আচার্য’, ‘সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী’। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী’, ‘প্রসঙ্গ মৌলবাদ’ ও ‘জালাল গীতিকাসমগ্র’। এ ছাড়া তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আরও আছে ‘পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন’, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা’, ‘সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার’, ‘সাহিত্য নিয়ে নানাকথা’ ইত্যাদি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here