ঢাকা, রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র জমার সময় বাড়ছে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৯ আগস্ট ২০২৪  

সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র জমার সময় বাড়ছে

সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র জমার সময় বাড়ছে

দেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে চলতি বছরের ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ, তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। সমুদ্রের ২৪টি ব্লক ইজারা দেওয়ার লক্ষ্যে আহ্বান করা হয় এ দরপত্র, যা জমাদানের শেষ তারিখ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলন, সরকার পতন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বগ্রহণসহ নানা জটিলতায় থমকে ছিল দরপত্র জমা নেওয়ার কার্যক্রম।

তবে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে দেশের সব খাতে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বেশ কিছু সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। বিগত সরকারের বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাতিল করলেও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চলবে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের পুরো প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী দরপত্র জমাদানের সময় বাড়ানো হবে আরও তিন মাস। দুই-একদিনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ  করতে যাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। 
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, সব ঠিকঠাকভাবে চললে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে দরপত্র আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। এসব আবেদন মূল্যায়ন চলবে পুরো ২০২৫ সাল পর্যন্ত। ২০২৬ সালে চূড়ান্ত হতে পারে অনুসন্ধানকারী কোম্পানি। ২০২৭ সাল নাগাদ খনন কার্যক্রম শুরু হলেও সমুদ্রসীমা থেকে প্রাপ্ত গ্যাসের সুফল পাওয়া যাবে ২০৩২ সালে। পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করবে দায়িত্বরত সরকার। সেটা অন্তর্বর্তী সরকার হোক বা গণতান্ত্রিক সরকার।
সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু।

বাংলাদেশের পাশের ব্লক থেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস উত্তোলন করছে মিয়ানমার। যে কারণে বাংলাদেশ অংশে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলে ধারণা করা হয়। এর প্রেক্ষিতেই আওয়ামী লীগ সরকার গত বছর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে।
সরকার পরিবর্তন হলেও দেশের স্বার্থে এই কার্যক্রম চলমান থাকবে জানিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, বিশ্বসেরা সাতটি প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত দরপত্র জমা দিয়েছে। আরও অন্তত ১৭টা কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে দরপত্র কেনার জন্য। তবে তারা নির্ধারিত সময়ের বাইরে সময় চেয়ে আবেদন করেছে। তাই আমরা দরপত্র জমাদানের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করব। অনুমোদন হলে দুই-একদিনের মধ্যেই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। 
জানা যায়, বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের ৫৫টি  কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দরপত্র জমাদানের জন্য। আমেরিকান কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও এক্সোন মবিল, জাপানি প্রতিষ্ঠানসহ অনেকগুলো কোম্পানি আগ্রহ দেখায়। সাতটি কোম্পানি থেকে দরপত্রের আবেদন জমাও হয়েছে।

কিন্তু আরও কয়েকটি কোম্পানি এখনো আগ্রহ দেখাচ্ছে জানিয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকটি কোম্পানি দরপত্র জমাদানের জন্য সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। তার প্রেক্ষিতে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল গত সরকারের সময়। অন্তর্বর্তী সরকার যদি এটির অনুমোদন করে তাহলে সময় বাড়বেই। 
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের স্বার্থে বিগত সরকারের আমলে নেওয়া ক্ষতিকর সিদ্ধান্তগুলো যেমন  পুনর্মূল্যায়ন হবে, তেমনি ভালো কাজগুলো চলমান থাকবে। আমরা আজই (বুধবার) ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছি, যেগুলো বিগত সরকারের নেওয়া প্রকল্প। উন্নয়ন কাজ তো চলমান থাকবে মেট্রোরেল আমরা পুনরায় চালু করেছি। এ রকম এটিও চালু থাকবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামিটের একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকার কারণে গ্যাস সংকটে ধুঁকতে হচ্ছে। এটা হচ্ছে শুধু আমদানি নির্ভরতার কারণে। যদি আমাদের নিজস্ব উত্তোলনের সক্ষমতা থাকত, তা হলে এমনটি হতো না। স্থলভাগের যে কূপগুলো আছে, সেগুলোর পাশাপাশি সম্ভাব্য অন্যান্য স্থানেও খনন কাজ চালাতে হবে।

জলভাগে অনুসন্ধান কার্যক্রম যদিও অনেক প্রক্রিয়া শেষেই বাস্তবায়ন সম্ভব তবু যদি একবার সম্ভব হয় তার পর আর পেছনে তাকাতে হবে না। আমদানি নির্ভরতা তখন শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে মনে করি।

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়