ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৪ ১৪৩১

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চুক্তি পর্যালোচনাসহ সংস্কারের উদ্যোগ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চুক্তি পর্যালোচনাসহ সংস্কারের উদ্যোগ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চুক্তি পর্যালোচনাসহ সংস্কারের উদ্যোগ

৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বগ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ আরও দুটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নিয়মিত কাজ পরিচালনার পাশাপাশি বিগত সময়গুলোতে বহু বিতর্কিত বিভিন্ন চুক্তি ও কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম দিকেই তিনি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বিগত সরকারের আমলে তৈরি করা সবচেয়ে বিতর্কিত দায়মুক্তির আইন ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’ পরবর্তীতে সংশোধিত-২০২১ আইনের কার্যক্রম রহিত করেন। এ আইনে সই হওয়া চুক্তিগুলোও পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বিদ্যুৎ খাতের ‘ইনডেমনিটি আইন’ হিসেবে পরিচিত।

সূত্র জানায়, নতুন সরকারের উল্লেখযোগ্য সংস্কারের মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০, পরবর্তীতে সংশোধিত ২০২১-এর অধীনে পরিকল্পনাধীন সব কার্যক্রম বাতিল। এখন থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশে জ্বালানির দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে গণশুনানির মাধ্যমে দাম সমন্বয় করা হবে। আরও সংস্কারের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে সেই মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বাদ দেওয়া। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ডে খোদ মন্ত্রণালয়ের সচিবরা চেয়ারম্যান হওয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতিতে কোম্পানিগুলো ডুবে আছে। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলেও খোদ সচিব বোর্ড চেয়ারম্যান থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

১৪ বছর আগে করা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন)-এর আওতায় সম্পন্ন সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই আইনের অধীনে গত ১৪ বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে কম-বেশি ৯১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি হয়েছে, আর জ্বালানি খাতে কম-বেশি ১৫টি চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় কোম্পানি আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিও এ আইনে করা হয়েছে। এসব চুক্তিতে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, সেটা পর্যালোচনা করতে পাঁচ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে।

এ পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। সদস্য হিসেবে আছেন বুয়েটের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আলী আশফাক, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মোশতাক খান।

কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কমিটি যে কোনো সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় যে কোনো নথি নিরীক্ষা করতে পারবে; সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে আহ্বান করতে পারবে এবং ওই আইনের আওতায় সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে সরকারের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুৎ খাতের প্রতিটি প্রকল্পই যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয়ে সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানিতে বদলি-তদবির, অনিয়ম বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এমন একটি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে চাই যাতে নিয়োগে কেউ অনিয়ম করতে না পারে। কারণ সেখান থেকেই মূলত অনিয়মের শুরু হয়। সামিট গ্রুপের তৃতীয় এলএনজি টার্মিনালের কাজ পাওয়া নিয়েও বিতর্ক রয়েছে; সেটাও পর্যালোচনা করা হবে। বিদ্যুৎ খাতের প্রতিটি প্রকল্প যাচাই-বাছাই করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই সব প্রকল্পের মধ্যে আদানির সঙ্গে চুক্তিও আছে।

২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২৩ সাল থেকে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার ৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে। হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ শুধু বাংলাদেশেই সরবরাহ করা হতো। তবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারত সরকার আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ভারতের বাজারেও বিদ্যুৎ বিক্রির অনুমতি দিয়েছে।

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়