ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৫ ১৪৩১

দরুদ কী? রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর পাঠের যত ফজিলত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

দরুদ কী? রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর পাঠের যত ফজিলত

দরুদ কী? রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর পাঠের যত ফজিলত

দরুদ একটি ফারসি শব্দ। অতএব, কোরআন-হাদিসে এ শব্দটি নেই। তবে কোরআন-হাদিসে এর প্রতিশব্দ ও পরিভাষা হলো ‘আস-সালাতু ওয়াস সালামু আলান্নাবিয়্যি’। অর্থাৎ নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সালাত ও সালাম।রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনলে তার প্রতি দরুদ পাঠ করতে হয়। নবী (সা.) এর প্রতি অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দাবি হলো তার প্রতি দরুদ পড়া। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো, প্রথমবার নবীজির নাম শুনে দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। এরপর প্রতিবার পাঠ করা মুস্তাহাব।

কোরআনে দরুদ ও সালামের প্রসঙ্গ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর দরুদ পড়েন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতারা। তাই অনুরূপ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বনি আদমকেও। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। হে ঈমানদাররা! তোমরাও তার প্রতি দরুদ পাঠ করো; এবং বেশি পরিমাণে সালাম পাঠ করো’। (সূরা: আহজাব, আয়াত: ৫৬)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দরুদ পাঠের ভাবার্থ হলো, আল্লাহ তাআলা তার ফেরেশতাদের সামনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রশংসা করেন। আর ফেরেশতাদের দরুদ পাঠের ভাবার্থ হলো, তারা নবী (সা.) এর জন্য বরকতের দোয়া করেন। (ফাতহুল বারি : ৮/৩৯২)

সংক্ষিপ্ত আকারে অল্প সময়ে পাঠ করা যায় এমন একটি দরুদ হলো—‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। এটা পড়তে খুব বেশি সময় লাগে না। আবার কোনো কাজ বন্ধ করেও তা পড়তে হয় না।

তাই যত বেশি সম্ভব দরুদ পাঠ করা চাই। আর সর্বোত্তম দরুদ হলো, দরুদে ইব্রাহিম, যা নামাজ শেষে পাঠ করা হয়।

দরুদ পাঠ আল্লাহর রহমত লাভের উপায়

একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা ১০টি রহমত নাজিল করেন। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ১০টি রহমত বর্ষণ করেন’। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪৮৫)

দরুদ পাঠে গুনাহ মাফ হয়

আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার উপর ১০ বার রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তার জন্য ১০টি মর্যাদা উন্নীত করা হবে’। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১২৯৭)

দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতাদের দোয়া

দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। আমির বিন রাবিআহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে এবং যতক্ষণ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। অতএব, বান্দা চাইলে তার পরিমাণ (দরুদ পাঠ) কমাতেও পারে বা বাড়াতেও পারে’। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৯০৭)

দরুদ পাঠ না করায় অভিসম্পাত

যে ব্যক্তি নবি মুহাম্মাদ (সা.) এর নাম শুনে দরুদ পাঠ করল না; তার প্রতি আল্লাহর রাসূল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবি (সা.) মিম্বরে ওঠার সময় ৩ বার আমিন বলেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মিম্বরে উঠলেন আর বললেন, আমিন-আমিন-আমিন। তিনি বলেন, জিবরাইল আমার কাছে এসে বলল, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি, সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন আমিন। আমি বললাম, আমিন। যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় তার মা-বাবা কিংবা তাদের একজনকে পেল, আর তাদের সেবাযত্ন করল না; এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করল। সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ তাআলাও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন, আমিন; আমি বললাম, আমিন। আর যার কাছে আপনার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আপনার ওপর দরুদ পাঠ করল না; অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন, আমিন। আমি আমিন বললাম। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৯০৭)

দরুদে ইব্রাহিম

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা অ আলা আ-লি ইব্রাহিম, ইন্নাকাহামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইব্রাহিমা অ আলা আ-লি ইবরা-হিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি ইব্রাহিম ও তার বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর, যেমন তুমি ইব্রাহিম ও তার বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১২৯১)

সংক্ষিপ্ত দরুদ

اللّٰهُـــمَّ صَـــلِّ عَلَــــى مُحَمَّــــد

উচ্চারণ: আল্লহুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদ।

অর্থ: হে আল্লাহ! দয়া ও রহমত কর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের বিশ্বনবি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়